শুধু লাশের গন্ধ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রেক্ষাপটের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, এই সংগ্রাম পরিণতি অর্জন করেছে ধাপে ধাপে, সেখানে নারীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বিদ্যমান। ১৯৬৯ এর গন- আন্দোলনে নারীরা ও ছাত্রী সমাজ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। অমানবিকতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদান কোন অংশে কম
নয়। ১৯৭১সালে বীথিকা বিশ্বাস ও শিশির কণা পাকিস্তানি সৈন্যদের গান বোট গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেয়। আজ
সেই সব নারীর গল্প বলবো যারা একাত্তরে নির্যাতনের শিকার হয় নির্মম ভাবে, পরবর্তীতে ট্রাজেডি হলো, যুদ্ধের পর তাদের পুনর্বাসনের অনেক প্রয়োজন ছিল, আশ্রয় দেওয়ার কথা।
অথচ সমাজে তাদের ঠাঁই মিলে নাই, পরিবারহীন, সভ্য সমাজ পরিত্যাগ করে। সব হারানো জীবন থেকে
এমন একজন নারীর কাহিনী শোনাব…..

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমানে ছাত্র শিবির) রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি, কুখ্যাত আল বদর
বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলাম ৭০জনের
একটি সশস্ত্র আল বদর স্কোয়াডের নেতৃত্ব দিতেন। আজহারুল এবং তার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনা ও কর্মকর্তাদের চাহিদা মাফিক বিভিন্ন ভাবে আশেপাশের গ্রাম থেকে মেয়ে
ধরে নিয়ে যেতেন অপহরণ করে।
“তারাগঞ্জ”– গ্রামটি রংপুর জেলা শহর থেকে ২৬ কি: মি:পশ্চিমে অবস্থিত। রংপুর সদরে আর্মি ক্যাম্প ছিল। তারাগঞ্জ কাছাকাছি হওয়ার জন্যে এই গ্রামে প্রায়ই হামলা চালানো হয়। ছিমছাম ও সুন্দর করে সাজানো ছোট একটি গ্রাম। সবাই একসাথে সুখ
দুঃখ গুলো ভাগ করে বসবাসরত জন জীবন। চারপাশে ধান ক্ষেত জুড়ে মাঠ সবুজ রঙের ফসল ভরা আর আকাঁবাকা দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মাটির ঘরের মানুষ গুলো ভালো ছিল। এখান কার হাইস্কুলের মাস্টার রেজা সাহেবের বড় ছেলে তুহিন আর ছোট মেয়ে আদরের শেফালী। মেয়েটা বড় সুন্দরী । মিষ্টি মুখখানা, গত মাসে বিয়ে ঠিক হয়ছে।
জলের নাম তাহের। অনুষ্ঠান সামনের ফাল্গুন মাসে। এরই মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল! দুঃসহ দিনরাত্রি, অসহায় বোধ।
সবাই যেন রাতে অন্ধকারে ডুবে যায়। ন্ড্র গ্রাম অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে কেউ টের যাতে না পায় এই জন্য সবাই বাতি নিভিয়ে রাখে। চেয়ারম্যান সাহেব নাকি আলবদর বাহিনী তে নাম লিখিয়েছেন,ইসলামী ছাত্র সংগঠনের আভ্যন্তরীণ অংশ হিসেবে কাজ করার
দায়িত্বে নিয়েছেন। উনার কাছে মাঝে মাঝে আল বদর বাহিনীর প্রধান এটি
এম আজহারুল ইসলাম আসেন।
এখানকার লোকেদের ধারণা তিনি সব
ব্যবস্থা করে দিবেন আমাদের কোনো ভয় নেই। বাজারের অবস্থা ভাল নেই।জিনিস পত্র ঠিক মতো গ্রামে আসছে না। সকালে সদাই আনতে গেলেন মাস্টার সাহেব মুদি দোকান খোলা আছে কিন্তু অনেক সদাই আসে
নাই। অল্প অল্প জিনিস গ্রাহক অনেক
মালামাল কম।হুরাহুরি অবস্থায় মাস্টার সাহেব প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, পেছন থেকে চেয়ারম্যান সেফাত উল্ল্যা ধরে ফেলেন।
গদগদ হয়ে বলেন
আহা রে!
মাস্টার মশাই পইরা যাইবো তোরা সবাই দেখিস না কেন?
সদাইপাতি দরকার হলে আমাকে জানাবেন।
আমি লোক দিয়ে পাঠাইয়া দেবো। আপনার কষ্ট করে আসার দরকার নেই।
শুনলাম ছেলেকে নাকি মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন? মাস্টার রেজা ভড়কে বললেন কে বললো?
নারে ভাই,
ও কোথায় আছে জানি না!
ওর চিন্তায় ঘুম আসছে না।
বড় বিপদে আছি ভাই।
কোন খোঁজ পাই নাই।
ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি থাকতে! দেখি খোঁজ নিচ্ছি।
যেখানেই থাকুক আমার কাছে খবর চলে আসবে।
তা আপনার মাইয়া কেমন আছেন? শরীর ভালো তো,
মনটা ভাল তো?
তাড়াহুড়া করে চলে যেতে উদ্যোগ নিয়ে উঠতেই চেয়ারম্যান সেফাত উল্লা ওনার হাতটা ধরে ফেলে!
আরে আরে ভাই যান কেন? আমি তো আপনার ভালোর জন্যই কুশলাদি জানতে চাইলাম। রাগ করলেন?
না রাগ করি নাই।
তাহলে একদিন আপনার বাড়ি গিয়ে আপনার ছেলের লেটেস্ট
খবর টা দিয়ে আসবো।
আসসালামু আলায়কুম
শিগ্ৰীয় দেখা হবে।
চিন্তার কোন কারণ নেই।
এই রহিম মিয়া মাষ্টার সাহেবকে সদাই
গুলা দিয়ে দাও, যান
বেচারা ভদ্রলোক কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে!
দোকানী ততোধিক হতভম্ব হয়ে তার বাজারের আইটেম গুলো গুছিয়ে ব্যাগে দেন।
মাস্টার সাহেব মুদি দোকান থেকে প্রায় একরকম প্রায় দৌড়ে বাড়ির দিকে চলে গেল।
পেছনে দিকে একবার তাকাতেই উদ্বিগ্ন চোখ দেখে চেয়ারম্যান সেফাত উল্ল্যার মুচকি মুচকি হাসি টের পাচ্ছে।
বাড়িতে এসে হাপাচ্ছিল, শেফালি এসে সদাই গুলা ঘরে নিয়ে যায় আর বোঝার চেষ্টা করে
বাবাকে ওরকম অস্থির দেখে মাকে
পাঠায়।
“তোমার কি অবস্থা কেন হাপাচ্ছো”!
আর বলো না ঘর থেকে বের হয়ে কোথায় যাওয়ার অবস্থা নাই।
গ্রামে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো আগের মতো আসছে না! আদানপ্রদান
বন্ধ হয়ে গেছে।
যা এনেছি খুব যত্ন করে রেখো,
চলতে হবে অনেক দিন।
কিন্তু…
রোকেয়া বেগম বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলো, কেন গো…
কি হয়েছে?
খুলে বলোনা!
চিন্তিত চেহারা নিয়ে রেজা মাস্টার শুধু বললেন, দেশের অবস্থা ভাল না।
সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে! সাবধান হতে হবে,যে কোনকিছু ঘটবে!
মেয়েটাকে আগলে রাখতে হবে।
ঐ মূহুর্তে তার ছেলের কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে উঠলো
রেজা মাস্টার এর স্ত্রী রাশেদা। রাশেদা আস্তে আরে আস্তে আওয়াজ করে কেঁদো না, একদম চুপ……
দেওয়ালেরও কান আছে! বুঝতে পারছো না!
শুনলে বিপদে পড়তে পারি।
কান্না করতেও পারবো না? না! কাঁদতে পারবেনা।
চারিদিকে অন্ধকার। শোন আজকে
চেয়ারম্যান সেফাত উল্ল্যা প্রশ্ন করছিল।
আমার ছেলে মেয়ে সম্পর্কে,
ওর নজর আমার মেয়ের উপর!
আল বদর বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে?
বলো কি তুমি? আমার সত্যিই ভয় করছে।
নিশ্বাস বন্ধ করে থাকো। দেখি ছেলের কোন খোঁজ পাই কিনা।
তুমি এক কাপ গরম গরম চা খেতে দাও।
হ্যাঁ যাচ্ছি… রাতের খাওয়া তৈরী করতে হবে।
হনহন করে রাশেদা রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছিল ওর সাথে মেয়ে
শেফালি কে নিয়ে গেল।
দুর থেকে দেখা দৃশ্য টি রেজা মাস্টাররের এর মনে
দারুণ শান্তির অনুভূতি এনে দিল।
এভাবে বেশ কিছু দিন কাটালো।
প্রিয় মুহূর্ত গুলোর মধ্যে
এক হলো যে কথাবাত্রা আলোচনা
মেয়ের শ্বশুর বাড়ি তে করা হয় কিভাবে মেয়েকে প্রাত্রস্থ করা যায়, এখান কার পরিস্থিতির অবনতি খবর ও দেওয়া হয়। ঘটনা পরবর্তী সময়ে পুরো বিষয় বদলে যায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লন্ড্ভন্ড হয়ে গেল!
সেদিন বৃষ্টি ভেজা মধ্য রাত ছিল
গরম গরম ভাত আলুর দম দিয়ে খেয়ে বিছানায় শুয়ে সবাই মাত্র ঘুম আসছে অমনি দরজার বাইরে থেকে ধপাস ধপাস আওয়াজ ভেসে আসছে
মন হয় দরজা ভেঙ্গে ফেলবে!
কে আসতে পারে?
এতো রাতে!
এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রেজা মাস্টার ফ্যাসফেসে গলায় বলে কে কে বলছেন? আমি…
আরে মাস্টার চিনতে পারছেন না কেন
আমি চেয়ারম্যান।
সেফাত উল্লাহর মুচকি হাসি টের পেলাম দরজা খুলে দেখি একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের সাথে করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। খসখসে গলায় বলল ভয় পাইছেন? আমি থাকতে কোনো ভয় নাই।
তা পরিবারের অন্যদের সাথে দেখা করান একটা ভদ্রতা আছে না।
কি বলেন সামনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে ডাকেন, আরে ডাকেন না
ভয়ার্ত কন্ঠে আওয়াজ করে উনার স্ত্রী
আর মেয়েকে ডাকলেন
এবং ওদের কে সে এমন ভাবে দেখছিল যেন কোন শিয়াল তার লোভাতুর চোখ দিয়ে চাটছিল। মেয়েটা বড় সুন্দরী! তুলতুলে নরম নরম !
যাইহোক তুমি ভালো আছো?
আমি তো তোমাদের
পরম বন্ধু।
কোন সমস্যা হলে সব সময় আমাকে স্মরণ করবে।
ঠিক আছে, আজকে যাই।
আসি,মাস্টার….
রেজা মাস্টার ফ্যাসফেসে গলায় কি যেন বিরবির করছিল,
সরু গলি দিয়ে দলবল নিয়ে হনহন করে চলে গেলে দরজা বন্ধ করে
দপ করে বসে পড়লো।
রাশেদার মনে ভয় মেশানো একটা কর্কশ প্রশ্ন ছিল।
ঐ লোক কেন এসেছিল?
কি চায়?
চিন্তিত হয়ে রেজা মাস্টারের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সে নিজের কাছে একি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে থাকে।
নিঃশব্দে নীরবে নিভৃতে জীবনের বেঁচে থাকার চেষ্টা যেন প্রথম বারের মতো শেফালির জন্য বোধহয় কঠিন বিষয় হলো।
পুরো ঘরটা অন্ধকার নিরব নিস্তব্ধ সেদিন রাত যেন শেষ হয় না……
রেডিও সেটের সামনে রেজা মাস্টার চুপ করে বসে আছে। নিশ্চুপ হয়ে খবর শুনছেন। ১৯৭১সালের ২৫শে মার্চ রাত থেকেই বাংলার মানুষের উপর নির্মম ভয়াবহতায় অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করছে,নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু হয়, এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী ছাত্র, সাধারণ মানুষ বাঙালি নাগরিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের,ধর্মীয় সংখ্যা– লঘু এবং পুলিশ, ইপিআর কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ কে হত্যা করছে। আর এই জন্য বাঙালি যুবক সাধারণ মানুষ সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এমন সব খবর পেয়ে রেজা মাস্টারের মনটা বিচিত্র ধরনের অনুভবে নিবিড় নিভৃতে
পুরতে থাকে।
হু হু করে ছেলে টার কথা মনে পড়ে, কোথায় আছে,
কেমন আছে,
বেঁচে আছে কিনা!
চিন্তায় মাথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে,
হঠাৎ করে মেয়ের ডাক শুনে ফিরে তাকিয়ে
দেখেন চায়ের কাপ সহ দাঁড়ান।
বাবা তোমার জন্য চা। আমি ছাদে যাচ্ছি,
শুকনা কাপড় চোপড় তুলে নিয়ে আসি।
ছাদ থেকে আকাশটা অনেক সুন্দর লাগছে, ওদের বাড়ির আশেপাশে কেউ একজন ফলো করছে
অনেক ক্ষন ধরে দাঁড়িয়েছিল। শেফালি ভূরুকুঁচকে খেয়াল করে মনে মনে ভাবে বাবাকে বিষয়টি জানাতে হবে।
বেশকিছু দিন পরে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে কারো কিছু করার থাকে না। সময়ের সাথে বিকৃতির এক দুষ্টু চক্ষু কান্নার সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এই গ্রামে।
মেয়েদের কে জোর করে রাতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কুখ্যাত আল বদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলাম আল বদর স্কোয়াডের জন্য ।
অল্প বয়সী মেয়েদের দরকার ছিল। স্কোয়াডের ঘাঁটি ছিল রংপুরের টাউন হল এলাকায়। তারাগঞ্জ গ্রাম বেশ কাছাকাছি ছিল। ওখানে তার সহযোগী ছিল সেফাত উল্ল্যা,অনায়সে সে মেয়ে
সাপ্লাই দিতো।
পুরো গ্রামের অলিগলি অধিবাসী সম্বন্ধে সে জানতো, সবাই তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে জানে। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন পরিবার এর তথ্যের ভিত্তিতেই রেকি করতো ছেলে মেয়ে কয় জন জোয়ান পোলা পান সেই খবর নিয়ে আক্রমণ করা হতো। প্রথমে ওরা টার্গেট করে হিন্দু মেয়ে।
হিন্দু পরিবার গুলোর অল্প বয়সের অনেক মেয়েদের ধরে নিয়ে সাপ্লাই দেয়, এখন আরো সুন্দর মেয়েদের দরকার……..
ঘরের চাতালে বসে হুক্যা টানছে আর ভাবছে,
আরো মেয়ের প্রয়োজন এখন, বাড়ির কাজের ছেলে রহমতকে
রেকি করতে পাঠাইছিলাম।
কিরে তুই কই রহমত? সিংগারা চা নিয়ে এখন
বসে আছিস!
দৌড়ে এল রহমত। হুজুর আমি সব খবর নিয়েছি। উত্তর পাড়ার বাসিন্দা রেজা মাস্টার এর মেয়ে শেফালি! ভূরুকুঁচকে তাকিয়ে থাকে সেফাত উল্ল্যা, ঠিক মতো খবর নিছিস?
জী হুজুর,
খবর পাক্কা দেড় ঘন্টার মতো প্রতিদিন সকালে ঘুম থেইকা উঠি আর ওগো বাড়ি পেছনের দিকে নজর দিয়ে বসে ছিলাম মাস ধইরা। এখন আপনি বলেন কি খবর চান? তথ্যের অভাব হবে না! বলেন…
আরে বুঝিস না!
বাড়ি নিঝুম কখন?
আক্রমণ করা যাবে কবে?
কিভাবে?পরিকল্পনা করছিস?
লোকজন যোগার আছে? রহমত খানিক বাদে মাথা চুলকে বললো হুজুর….
ভোর বেলা নিরিবিলি পরিবেশ থাকে
প্রতিবেশীরা ঘুমিয়ে থাকে
চারিদিকে আঁধার নিস্তব্ধ গ্রাম,এটাই তো বড় ভাল সময়।
আগামীকালই কাজটা করতে পারি, কি বলেন হুজুর? হুম…..
আধ বোজা চোখ তুলে তাকাল সে ….

ঠিক যেন হাতের কাছে নাগালের মধ্যেই শেফালির লকলকে শরীর টা।টান টান পেশি গুলো,
কেমন যেন আলোড়িত করে তুলছে, বর্ষার চিকলী নদীর মতো। সব ধোয়া ধোয়া আলো আঁধারির খেলা শুরু হয়ে গেল।
জোছনা রাতের অন্ধকারে মিশে গেছে…..ভাবনা গুলো।
খবরদার আগেই কাউকে কিছু বলবিনা হু! কাউকে কিছু বলবিনা।
ব্যবস্থা নে,
লাঠিয়াল লোকজন জড়ো
কর আজকে সারাদিন ।
আশেপাশে আবার মুক্তিযোদ্ধাদের আভাস পাওয়া গেছে। প্রতিপক্ষের শক্তি আস্তে আস্তে বাড়ছে, সেই জন্য সাবধানে থাকিস মনে রাখিস মুক্তিযোদ্ধার বোন । আবার কেন্দ্রীয় ভাবেও আক্রমণ করতে পারি।
কেন্দ্রে কথা বইলা নেই।
রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ভোর বেলায় সিদ্ধান্ত।
ঠিক আছে?
এখন যা, আমি একটু বসি,
এককাপ চা পাঠিয়ে দে —
বলেই সেফাত উল্ল্যা ইজি চেয়ারে শরীর টা এলিয়ে দিল আর চোখের সামনে ভেসে ভেসে আসছে শেফালির লকলকে শরীর,
….অনাঘ্রাতা নারীর সুবাস, জড়িয়ে ধরলো সাপের মতো করে…
চেয়ারম্যানের পুরো শরীর।
ইশশিরে …..দারুণ ঝ্যাকাস !
হুজুর হুজুর ঘুমিয়ে গেলেন নাকি ।
আপনার জন্য চা আনছি…..

এখানে একটা নদী আছে। যার নাম চিকলী নদী, যমুনেশ্বরী নদী, এর শাখা প্রশাখা হলো চিকলী নদীর সৃষ্টি। নদীটি খুব সুন্দর ঠান্ডা বাতাস।
তারাগঞ্জ উপজেলার মোট আয়তন হলো ৩১.৭৯২একর জমির মধ্যে নদীর
আয়তন হচ্ছে ২৫০ একর।
তারাগঞ্জ উপজেলার নদী অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে চিকলী নদীর তীরে বসে মানুষের আহাজারি শুনতে শুনতে দিন যাপন করে। নদীর বুকে চাঁদ উঠে। আমাদের যাপিত জীবনে নদী চাই।
রেজা মাস্টার মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক হিসেবে আনেক দিন ধরেই লক্ষ্য করেছেন নদী ভাঙ্গননের পথে, কিন্তু গ্রামের চেয়ারম্যান জনাব সেফাত উল্ল্যার কোনো খবর নেই। সে শুধু পাকিস্থানের লোকজনের চামচা হয়ে ঘুরে। কি ভাবে পাকিস্থানের সেনা বাহিনীকে খুশি করা যায় সেই চেষ্টা। নারীদের সাপ্লাই করে।
জোর করে।
এমন একদিন আসে বৃষ্টির সকাল বেলা হালকা হালকা রোদেলা দিন শুরু হয়। গ্রামের মানুষ গুলো খুব সাধারণ ভাবে দিনটা শুরু করে –লোক গুলো কাজে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন….
ঠিক তখনই ধীরে ধীরে সেই জলপাই রঙের ট্রাঙ্ক ঢুকলো
… যখন আমি বাড়ীর বারান্দায় বসে আছি একা একা,
দূর থেকে একটা হট্টগোল শুনতে পাচ্ছি,
এতো সকালে কি আবার হলো? নিজের কাছে নিজেই বলছি কিন্তু দূরের আওয়াজটা ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকলে আমি উঠে বাড়ির দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বেশ কিছু মানুষের আহাজারি তার দিকে এগিয়ে আসছে ,
আমার এক পরিচিত লোক আমার কাছে জরুরী ভিত্তিতে বললেন,‘রেজা ভাই মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে!
গ্রামে সেনাবাহিনী ঢুকে গেছে! বড় বড়
ট্রাঙ্ক ঢুকলো পুরো গ্রাম ঘিরে রেখেছে,
আওয়াজ পাচ্ছেন না?
আপনি সন্মানিত মানুষ তাই সাংঘাতিক খবরটা দিতে আসলাম। সময় নাই,
আমি গেলাম।
লোকটা জোড়সে এক দৌড় দিল।
আমি টলতে টলতে বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখি আমার মেয়ে, আর ওর মা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
ওরা কী বলছে গো?
আমরা এখন কোথায় যাব? জানিনা!
রেজা মাস্টার গোঙাতে লাগলো, সময় একদমই নাই।
কয়েকটা কাপড় চোপড় ব্যাগে নিয়ে চল যাই।
কথা শেষ করতে পারে নাই!
অমন সময় হুরমুর করে ঘরের ভিতরে
একদল উচ্ছৃঙ্খল আচরণের সেনা ঢুকে পড়ে ওই মূহুর্তে কোনো কিছু করার জন্য সুযোগ নেই, ওদের সঙ্গে ছিল চেয়ারম্যান সেফাত উল্ল্যা, মুখে
পান চিবাতে চিবাতে ফ্যাসফেসে গলায় বলে,
হুজুর আমি তো টার্গেট করে রেখেছি আপনার জন্য আপনি নিজেই নেমে গেলেন এখনতো সরাসরি মাল সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন।
আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ।
কি রেজা মাস্টার চুপ করে আছেন যে
কিছু একটা বলেন?
আপনার পোলা তাহলে মুক্তি যোদ্ধা?
এটা ঠিক করলেন? মুসলমান হয়ে
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে! আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন।
আর আপনি যা করছেন সেটা ঠিক?
রেজা মাস্টার এর কথা শুনে তেলেবেগুনে জলতে লাগলো দাত খিটমিট করতে করতে হাত তুলে ইশারা দিলেন ফায়ার করার জন্য।
খানে দজ্জ্যালদের একে একে সবাই ঝাপিয়ে পড়লো শেফালির মা বাবার ওপরে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে শেফালি বুঝে ওঠার পর একবার
ভূরুকুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে সব শেষ করে দিলেন? হ্যাঁ দিলাম এবার চল তুই আমাদের সাথে।
মোটা রডের সাথে ওর লম্বা চুল গুলো
নিয়ে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে,আশ্লীল গালি দিচ্ছে।
ট্রাকে উঠে দেখলাম আরো অনেক অল্প বয়সের কিশোরী ,তরুনী অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। যারা প্রতিবাদী চেহারা তাকে ওই রকম রডের সাথে বেঁধে নিয়ে ট্রাকে চাপায়।হিন্দু মেয়েদের মাথার চুল হিচড়ে ন্যারা
কারে দিলো।
আমাদের সকলকে প্রথমে উলঙ্গ নিল
যাতে পালাতে না পারি।
ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা।
আর্মি সেনারা রংপুর জেলা স্কোয়াডে শেফালি সহ অন্যান্যদের কে নিয়ে সবাইকে মাটিতে ফেলে।
বাঙ্কার এর মধ্যে লাথি দিতে দিতে সম্পুর্ন শরীরে চাবুক মেরে আধমরা করে ফেললো! আমি সহ ২৩জন ছিলাম। এই অবস্থায় আমাদের দেখেই
সৈনিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে ।
তারা ব্যারাকে ঢুকে প্রতিটি যুবতী, কিশোরী, তরুনী, বালিকার সম্পূর্ণ উলঙ্গ শরীর হাতানো শুরু করে দিল।
রাতের অন্ধকারে আসলো সেনা কর্মকর্তার প্রধান, তিনি এসেই মেয়েদের গাল, পেট,ঘারে আবারও চাবুক মারতে মারতে রক্তাক্ত যখন হয়ে যায় ঠিক তখনই বুকের স্তন চুষতে থাকে….এক লহমায় ওরা…
হঠাৎ করেই কামড়ানো শুরু করে দিল শেষ পয‌্যায়ে রক্তাক্ত করে মাংস তুলে
নেয়। তারপর শুরু হয় গণধর্ষণ!খুব আনন্দ ওদের আমাদের অত্যাচার করে।
শেফালি এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ২৮ঘন্টা সঙ্গাহীন ছিল।
ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা ঘরে আমরা ২৩ জন নারী বাস করেছি উলঙ্গিনী লজ্জা ঢাকার কিছুই নেই অথচ
কেউ লজ্জা পাচ্ছি না।
চোখের পানি ঝরে শুকিয়ে গেছে
…. কেউ কাউকে চিনি না।
কিন্তু তার পরেও সবাই সবার কাছে যেন আপনজন, আমরা বাঙালি।
এতো নিষ্ঠুর নির্যাতনের পরেও নিশ্চল মুখে চকিত বাঁচার ইচ্ছা।
নির্ঘাত সকলের জন্য মৃত্যু অবধারিত জেনেও,
মনের গহীনে লালিত
এই অন্ধ বিশ্বাস যদি কোন ভাবে বেঁচে যাওয়া হয়!
হয়তো আবার নতুন জীবনের শুরু কোন ভাবে হয়!যদি….
এখানে পরিচয় হয়, বীথিকা বিশ্বাসের
সাথে। সাহসী যোদ্ধা,প্রতিবাদী ছিল
পাকিস্থানের লোকজনের কাছে
ও ছিল যৌন দাসী
অনেকটা গনিমতের মাল।
অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা
দিয়েছিল।
বীথিকা কে সারারাত নৃশংসভাবে ধর্ষণ করা হয়।
দিনেরবেলা ছিল আবার
অন্য রকম অত্যাচার!
ভাবলেই শেফালি শিউরে উঠেছিল ।আমার মনে আছে,
একশো জন সেনা গণ ধর্ষণ করতো আমাদের । ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল।
সেদিন খুব সুন্দর রোদ আর আলো ছিল …..
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের সবাইকে ওপেন জায়গায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে
বললো সৈনিকরা
ছয় ফুট উচ্চতার কর্মকর্তারা চেয়ারে বসে আছে।
হাতে লাঠি এবং রাইফেলের নল।
চেয়ারে বসে অল্প বয়সের দুইজন
কিশোরীকে কাছে আসতে ইশারা
করে।
কাছে যেতেই উলঙ্গ মেয়েদের বুকে দাঁত লাগিয়ে মাংস ছিড়ে নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে সবাই। এতে
হঠাৎ বীথিকা বিশ্বাস প্রতিবাদ করে
পাকিস্থানী সেনারা রেগে গিয়ে
ওকে টেনে নিয়ে যোনির ভিতরে বন্দুকের নল ও বেয়নেট ঢুকিয়ে দিল
তারপর ও ছেড়ে দিল না।সবার মাঝখানে এনে দুজনে
দুপা দু’দিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল।
অট্টহাসিতে ফেটে গেল….
ওরা আনন্দে আত্মহারা হতো।
আমার তখন
বোধ শক্তি লোপ পায়।
কতক্ষন বোধহীন ছিলাম ।
আমি জানিনা
তবে আমার চোখ খুললো রাজাকার সেফাত উল্ল্যার ডাকে।
ক্ষুধা তৃঞ্চায় শরীর যেন ঠান্ডা হিম
নিস্তেজ আমার চোখের দৃষ্টি ঘোলা তাই চট করে কাউকে চিনতে পারলাম না।
অনেক ক্ষন পরে চিনলাম।
আমি চোখ তুলে তাকাতেই বলে উঠলো —
– তোমার জন্য তদবির করে
রেখেছি! পান খাওয়া মুখে হিশহিশ করে হাসে আর বলে তোমার কোনো ভয় নাই, উনারা তোমার সাথে ওই হিন্দু মেয়েটার মতন করবে না। তুমি আমার পছন্দের মাল ওদের ভোগ করার পর আমি তোমাকে নিয়ে যাব
আমার আস্তানায়!
আমার খুব ঘৃণা হচ্ছিল রাজাকারটার চোখের দৃষ্টিতে জীবিত শকুনের ডাক। ওর শরীরে লাশের গন্ধ পাচ্ছিলাম। ইশ্বরের কাছে হাত জোড় করে ভয়ঙ্কর ঝড়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলাম
সব কিছু ওদের
তছনছ করে উড়িয়ে নিয়ে যাক! পাকিস্থানের সেনারা মাস তিনেক আমাকে ভোগ করার পর।
একদিন রাজাকারটার হাতে তুলে দিল!
আমি তখন আমার দুমড়ানো মুচরানো
রক্তাক্ত শরীরের ভারে ক্লান্ত।
সেফাত উল্ল্যার খুশি লুকানো যাচ্ছিল না যেন চোখের পলক ফেলতে পারে না সে!
অনেকদিনের শিকার আজ তার হাতে
ধরা দিয়েছে।
আজকে শেফালি কে কোন পরিত্যক্ত
বাড়িতে ওঠাবে, মনে মনে বুদ্ধি করে।
তারপর তারাগঞ্জে নিয়ে যাবে।
ওর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে আগেই।
বাপ মা নেই! খুব ভালো
এখন যাইবো কই?
আমারে ছাড়া উপায় আছে?
রীতিমত ঘুহার ভেতর থেকে বের হয়ে
নিশ্চল মুখে দাড়িয়ে ছিল শেফালি।
এক জংগল থেকে আরেক জংগলে।
হুজুর যাই তাহলে,
আমি আরো মাল
সাপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।
চিন্তা কইরেন না।
সেনা কর্মকর্তা তার গোঁফ পেঁচাতে পেঁচাতে হাসতে লাগল ।
যাইয়ে ওর নূতন মাল লাইয়ে,
ঠিক হে ,আভি যাও।
শেফালির হাত ধরে অনেকটা পথ সোজা চলার পর। রাজকারটা কথা বলতে চেষ্টা করছে।
শেফালি কিছু শুনতে পায় নাই।
ওর তৃষ্ণার্ত কন্ঠ একটু পানির কামনায় হু হু করে উঠলো। কিন্ত দিল না পানি, হঠাৎ থামলো রাস্তায়,
শয়তানটার হয়তো খিদে পেয়েছে যার জন্য সে দুই প্যাকেট খিচুড়ি কিনল।
রাস্তায় দোকান থেকে। তখন পানি দিল তাকে।
এমনিতেই ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা পথ
কোনায় ভাঙ্গা ইটের বাজারে
একটা ভ্যানে লুকিয়ে থাকা
খাবারের দোকান। সব আল বদর বাহিনীর আওতায় এসব চলছে।
বিকেলে ছোট্ট পরিত্যক্ত একটা বাড়ি
নোংরা বিছানা সেখানে আমাকে ওঠালো।
রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে না, সন্ধ্যার
দিকে নোংরা বিছানায় আমাকে ছুড়ে ফেলে হনহন করে পরনের কাপড়
খুলে ঝাপিয়ে পরেছিল!
ওই রাতে ৮০ বার ধর্ষণ করে আমাকে।
মুখের ভিতরে ফেনা উঠে যাওয়ার পর ক্ষান্ত হন।
দিনের পর দিন আমি আশায় আছি,
আমার দেশের কি অবস্থা?
জানিনা কিচ্ছু আমি।
আমার বড় ভাই তুহিন
এখন কোথায?
বেঁচে আছে ?
নাকি মরে গেলো।
নাকি মেরে ফেলা হলো!
কে জানে!
নানান চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে মন।
এরা মধ্যেই ঘটলো আরেকটা কঠিন এক সত্য,মুখোমুখি হলাম।
শরীর খারাপ হতে লাগলো
আমি সকাল থেকেই বমি করছি
আশ্চর্য হলাম!
যখন থেকে বমি করছি তখন থেকে
রাজাকারটা আমার কাছে ঘেঁষতে
দেখি না! সরে পড়লো, আমাকে ফেলে রেখে চলেও গেল!
আমি সন্তানের মা হতে চলেছি, কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। কে এইন সন্তানের বাবা? পাকিস্থানী সেনারা ? নাকি রাজাকার সেফাত উল্ল্যা?
টালটমাল দিনগুলো মনে হয় শেষ হয় না। আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি….
হঠাৎ করেই একদিন মিছিলের একাংশ আমার ঘরের পাশদিয়ে যাচ্ছে
আমি রীতিমত দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে ওদের সামনে এসে ধপাস আওয়াজ করে পরেছি….
আমি যখন চোখ দুটো খুলি কিছু বোঝার আগেই একজন নার্স এসে আমাকে বলল —
তুমি এখন পুনর্বাসন কেন্দ্রে আছো।
তোমার মতো দশ হাজারেরও বেশি মেয়ে ভর্তি আছে।
মুখে কোনো কথা নাই
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি।
এই জীবন এই শরীর নিয়ে এখন কি করবো?
কোথায় যাবো?
খোদা তোমার কি বিচিত্র বিচার।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানতে পারি দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়। আমার হবু স্বামী তাহেরকে খবর পাঠাই, ফোন করি, একটি বারের জন্য
আসেনা, এটাও জানলাম ওরা ভারতে ছিল। আত্মীয় স্বজনের কাছে ফিরে যেতে চাইলাম চাচা মামাদের অস্বীকৃতি টের পেলাম। এখন তো
আমার সত্যিই কেউ নাই।
একদমই একা নিঃস্ব ….
ঘৃণ্যদের সন্তান আমি কেন নেবো?
স্বাধীনতার ছয় মাস পর জানা গেল সে নাকি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে ।
ভাবতে ভাবতে বদ্ধ উন্মাদ পাগল হয়ে যায়। অথচ সবাই যখন বন্দী ছিল
বন্দী থাকার সময় সবাইসহ
শেফালি ভাবতো, দেখবে
যখন স্বাধীনতা পাবো, আমাদের খুব সন্মান হবে!
চিহ্নিত করে বলবে দেখো সাহসী যোদ্ধা। বুক ফুলিয়ে গর্ব বোধ করবো। নারী মুক্তিযোদ্ধা!
বধ্যভূমিতে ভয়াভয় দিনগুলো
কষ্টের অভিজ্ঞতায় সবাই
মায়া করবে। আশ্রয় দেবে। বাস্তবে
কিন্তু গ্রামের একটা লোক এসে খোঁজ নিলোনা। কেউ মায়া করলো না
এমনকি তার হবু স্বামী তাহের এসে খোঁজ নিলোনা।
জানতো সে বেঁচে আছে,
ভাল নেই।
বহুদিন অপেক্ষা করতে করতে
পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে বাচ্চাটা
ফেলে রেখে, পালিয়ে চিকলী নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকে। পাগলী বলে তাকে, শেফালি …… দিনের শেষে অন্ধকারে কাকে যেন খুঁজে? আর বলে
আমি কাউকে পেলাম না
বাবা মা ভাই পরিচিত কেউ নেই।
চারিদিকে শুধু লাশের গন্ধ ……শুধু লাশ, নারীর উলঙ্গ ঝলসানো শরীর
শেফালি হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে নদীর জলে ভেসে গেলো …….পরেরদিন সকালে ফুলে ফেঁপে ওঠে শেফালির গলিত

Leave a Comment